ইসলামিক বিষয়ের এক বিশাল সমাহার

কিতাবসমূহ

Friday, September 27, 2019

রাসুল (সা:) এর শরীরে চাটাইয়ের বিচানার দাগ দেখে হযরত ওমর (রা:) এর অনুভূতি


ঘরের দুয়ারের নিকট নীরবে বসে আছেন হযরত ওমর (রা:) । মনটা খুব বিষন্ন। তাঁর অতীত জীবন তাঁকে ভীষণ পীড়া দিচ্ছে। কত না ভুল করেছেন তার অতীত জীবনে। কত পাপ করেছেন জেনে, না জেনে। অগ্নি পূজা করেছেন, পাথরের মূর্তির পূজা করেছেন, মদ্য পান করেছেন। এমন কি রাসূল (সা.) কে হত্যা করতে ও উদ্দত হয়েছেন।
ওমর (রা.) আকাশের পানে তাকালেন।ঝকঝকে আকাশ।সাদা-নীল মেঘ গুলো আকাশে খেলা করছে।কিন্তু এই সুন্দর আকাশ তার মনকে দুলায়িত করতে পারছে না। তাঁর চোখ দিয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে অনুশোচনার মেঘ অশ্রু মাটিতে পড়ছে। আল্লাহ কি মাফ করবেন সেই পাপ, সেই ভুল গুলো। নিশ্চয় করবেন।তিনি তো রহমান।
তার বিবি জয়নব (রা:) পিছনেই দাড়িয়ে আছেন। তাকে একটা কথা জানানো দরকার। কিন্তু তার সাথে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না। কিভাবে বলবেন সমস্যার কথা, বিপদের কথা। স্বয়ং মুশরিক দলের নেতা আবু জাহেল, আবু লাহাবের মত ক্ষমতাবান মানুষ পর্যন্ত তাকে ভয় পান। কিন্তু কথাটা না বললেই নয়। তিনি অবশেষে বলেই ফেললেন, - হযরত একটা কথা ছিল।ওমর রা. চমকে উঠলেন হঠাৎ তাঁর বিবির কথার আওয়াজ পেয়ে। তিনি হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ মুছলেন। কিন্তু স্ত্রীর দিকে ঘুরে বসলেন না। তিনি চান না তার স্ত্রী তার বিষন্ন অবস্থাটা দেখুক।আকাশ পানে তাকিয়ে থেকেই বললেন,
-বল, কি কথা।
-আসলে ঘরে গতকাল থেকে কোন কোন খাবার নেই। গত রাতে সন্তানদের গল্প বলে, ভুলিয়ে ভালিয়ে ঘুম পারিয়েছি। কিন্তু আজ কি বলব!
ওমর রা. ভুলেই গিয়েছিলেন গতকাল রাতে তিনি না খেয়েছিলেন। এশার নামাজ পড়ে, বাসায় এসে সামান্য ঘুমিয়ে সারা রাত ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়েছেন। রাতভর ইস্তেগফর করেছেন। রাত গড়িয়ে সকাল হয়েছে। সকালের খাবারও এখনও খাওয়া হয়নি!! তার ঘরের মানুষরা ও না খেয়ে আছেন??!! তিনি বিবি কে পাল্টা প্রশ্ন করলেন - ঘরে কোন খাবারি নেই?
-না। গতকাল সামান্য যতটুকু জব ছিল সেটা দিয়ে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু আজ কি করব?
আমরা হয়ত না খেয়ে দিন পার করতে পারব কিন্তু সন্তানরা তো পারবে না। ওরা ছোট, অবুঝ। ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করার ক্ষমতা ওদের নেই।ওদের জন্য হলেও কিছু খাবারের ব্যবস্থা করুন।
ওমর (রা:) কপালে চিন্তার নতুন ভাঁজ পড়ল।দারিদ্রতার ভাঁজ। তাঁকে বাজারে যেতে হবে। কাজ জোগার করতে হবে। খাবার কিনতে হবে।
তিনি উঠলেন। ভাবলেন বাজারে যাওয়া আগে রাসূল সা. এর সাথে সাক্ষাত করে যাবেন। তার পবিত্র মুখ খানা দেখে অনুশোচনার জ্বালা কিছুটা কমিয়ে নিবেন।এসব ভাবতে ভাবতে ওমর রা. রাসুল (সা:) বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন।
ওমর (রা:) সালাম দিয়ে, রাসুল (সা:) কামরায় প্রবেশ করতেই দেখলেন, এক জীর্ণ চাটাইয়ের ওপর রাসূল (সা:) নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছেন। দারিদ্রতা চাটাইয়ের পার্শ্ব গিলে ফেলেছে। চাটাই টি খেজুর গাছের শক্ত পাতা দিয়ে তৈরী। রাসুল (সা:) শরীরের এক পাশে চাটাইয়ের খেজুরের শক্ত পাতার দাগ পড়ে গেছে, সামান্য গর্তের মত সৃষ্টি হয়েছে।
মাথার নীচে খেজুরের ছাল-ভর্তি বালিশ। মাথার উপর ছিল রোদে না শুকানো চামড়া। ঘরের এক কোণে সল্প পরিমাণ যব পড়ে আছে।তার পাশে পর্দার নিচে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কিছু ঘাস।
রাসুল (সা:) এ অবস্থা দেখে ওমর (রা:) তার দারিদ্রের কথা ভুলে গেলেন। তিনি অঝর ধারায় কাঁদতে লাগলেন।
ওমর রা. এক ফোটা চোখের পানি রাসুল (সা:) পায়ে পড়তেই, উনার ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ মেলতেই দেখেন ওমর (রা:) চোখে পানি। ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছেন। রাসুল (সা) অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-হে ওমর কিসে তোমাকে এক দুঃখ দিল। কিসের জন্যে তোমার চোখে পানি?
ওমর (রা:) ভারী গলায় বললেন, হে আল্লাহর প্রিয় নবী! কেন আমি কাঁদবো না। এ চাটাই আপনার পবিত্র শরীরে চিহ্ন এঁকে দিয়েছে। সামান্য যব, চাটাই এই হল আপনার সম্পদ, যা দেখেছি তা ছাড়া আর কিছুই নেই। অথচ কায়সার ও কইরা কাফিররা স্বর্নের সিংহাসন, রেশম বিছানা, ফল-ফলাদি ও ঝর্ণাধারার মাঝে বসবাস করে। আর আপনি আল্লাহর নবী! আল্লাহর প্রিয় পাত্র! আপনার এ কি অবস্থা! দয়ার নবী রাসূল (সা:) মৃদু হেসে বলেন, তারা ঐ শ্রেণীর লোক যাদের কে ভোগ-বিলাস অগ্রিম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা দ্রুতই ফুরিয়ে যাবে। আর আমরা হলাম ঐ শ্রেণীর লোক যাদেরকে আখেরাতে নায-নেয়ামত দেয়া হবে। কিন্তু সেই নায-নেয়ামত কখনও ফুরিয়ে যাবে না। তুমি কি চাও না আমাদের জন্য হোক সেই আখেরাত। তাদের জন্য হোক এই দুনিয়া।
ওমরা রা. এই কথা শুনে আনন্দে তার চোখ ঝলমল করতে লাগল। খুশিতে তার অনুশোচনা, দু:খ, কান্না দূর হয়ে গেল। ওমর (রা:)বলেন, হ্যা। আখেরাতই আমাদের ভোগ-বিলাস আনন্দের জায়গা, সেটাই আমাদের চিরস্থ্য়ী আল্লাহর অসীম নেয়ামত ভোগ করার জায়গা।
হযরত মুহাম্মদ (সা:) ও ওমর (রা:) এর কথা শুনে আনন্দে হেসে দিলেন এবং বললেন, বুদ্ধমানরা মাত্রই এভাবে ভেবে থাকে।
হাদীস, ইবনে হিব্বান-৪১৮৮, আহমদ-১/৩

No comments:

Post a Comment