ইসলামিক বিষয়ের এক বিশাল সমাহার

কিতাবসমূহ

Tuesday, June 11, 2019

উম্মতের জন্য নবীর দুআ

একদিন মা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা রাসূলে আকরাম ﷺ সাথে ছিলেন ।

রাসূল ﷺ কে বেশ উৎফুল্ল দেখে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করুন । রাসূল ﷺ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার জন্য দোয়া করলেন । "হে আল্লাহ আয়েশাকে মাফ করে দাও । তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দাও, তার আগামীর গুনাহ মাফ করে দাও, তার গোপনে করা গুনাহ মাফ করে দাও, তার প্রকাশ্যে করা গুনাও মাফ করে দাও ।

" রাসূল ﷺ দোয়া শুনে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হাসলেন । তিনি এত হাসলেন যে হাসতে হাসতে রাসূল (ﷺ) এর কোলে মাথা রাখলেন। সুবহানআল্লাহ।


রাসূল ﷺ আয়েশাকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার এই দোয়া কি তোমাকে আনন্দিত করেছে ? আয়েশা (রাঃ) বললেন, কি করে এমন দোয়া কাউকে সন্তুষ্ট করতে না পারে !
আমাদের প্রিয় নবী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে বললেন, আল্লাহর কসম ! আমি আমার উম্মতের জন্য আমার প্রতিটি নামাজে এই একই দোয়া করি ।
যে দোয়া রাসূল ﷺ উনার প্রিয়তম স্ত্রীর জন্য করেছেন সেই একই দোয়া প্রতি নামাজে তিনি তাঁর উম্মতের জন্য করেছেন, আপনার জন্য, আমার জন্যও করেছেন । তিনিই আমাদের প্রিয় রাসূল ﷺ।

-
একদিন চলার পথে রাসূল ﷺ কেঁদে উঠলেন । সাহাবারা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি আমার ভাইদের জন্য কাঁদছি । সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমরা কি আপনার ভাই নই ? রাসূল ﷺ তোমরা তো আমার সাথী । আমার ভাই হল তারা যারা আমার পরে আসবে আর আমাকে না দেখেই আমার উপর ঈমান আনবে ।

আপনি এই দুনিয়াতে আসার আগেই রাসূল ﷺ আপনার জন্য কেঁদেছেন, আপনাকে মিস করেছেন । আমি আপনি কি কখনও প্রিয় নবীকে মিস করেছি? কেঁদেছি কখনও ? যে নবী আমার আপনার জন্য প্রতি ওয়াক্ত নামাজে দোয়া করতেন, সেই নবীর নামে দরুদ পড়েছি কয়দিন ? ভালোবেসে কোনদিন তার কয়টা সুন্নাহ পালন করেছি আমরা ?
-
রাসূল ﷺ একটি গাছে হেলান দিয়ে খুতবাহ দিতেন, তখনও মিম্বার তৈরী হয়নি । পরের সপ্তাহে রাসূল ﷺ যখন মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন সাহাবারা বলেন, গাছের ভেতর থেকে শিশুর মত অঝোরে কান্না তারা শুনতে পেয়েছেন । একটি গাছও রাসূল ﷺ মিস করেছে, তার জন্য চোখের পানি ফেলেছে ।

-

শেষ কবে আমি আপনি আমাদের প্রিয় নবীর জন্য কেঁদেছি ?
আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ ﷺ এর আদর্শে জীবন পরিচালনার তাওফিক মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে দান করুন।
আমিন!!!
মৃত্যুকালে রাসূল (সা:) যে কথাটি বারবার বলেছিলেন
হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর জীবনের শেষ মূহুর্ত চলছে। 'ঠিক সে সময় একজন লোক এসে 'সালাম' জানিয়ে বললেন, আমি কি ভিতরে আসতে পারি। রাসূল (সাঃ) এর কন্যা ফাতিমা (রাঃ) বললেন, দুঃখিত আমার পিতা খুবই অসুস্থ। একথা বলে ফাতিমা (রাঃ) দরজা বন্ধ করে রাসূল (সাঃ) কাছে গেলেন। হযরত রাসূল (সা) বললেন, কে সেই লোক? ফাতিমা বললেন, এই প্রথম আমি তাকে দেখেছি। আমি তাকে চিনি না।
রাসুল (সাঃ) বললেন শুনো ফাতিমা, সে হচ্ছে আমাদের এই ছোট্ট জীবনের অবসানকারী ফেরেশতা আজরাইল। এটা শুনে হযরত ফাতিমার অবস্থা তখন ক্রন্দনরত বোবার মতো হয়ে গিয়েছে। রাসূল (সাঃ) বললেন, হে জিবরাঈল আমার উম্মতের কি হবে? আমার উম্মতের নাজাতের কি হবে ? জিবরাঈল (আঃ) বললেন, হে রাসুল আপনি চিন্তা করবেন না, আল্লাহ ওয়াদা করেছেন আপনার উম্মতের নাজাতের জন্যে।
মৃত্যুর ফেরেশতা ধীরে ধীরে রাসূলের কাছে এলেন জান কবজ করার জন্যে। মালাকুল মউত আজরাইল আরো কাছে এসে ধীরে ধীরে রাসূলের জান কবজ করতে থাকলেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জিব্রাইলকে রাসূল বললেন ঘোঙানির সাথে, ওহ জিবরাঈল এটা কেমন বেদনাদায়ক জান কবজ করা। ফাতিমা (রাঃ) তার চোখ বন্ধ করে ফেললেন, আলী (রাঃ) তার দিকে উপুড় হয়ে বসলেন, জিবরাঈল তার মুখটা উল্টা দিকে ফিরিয়ে নিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, হে জিবরাঈল তুমি মুখটা উল্টা দিকে ঘুরালে কেন, আমার প্রতি তুমি বিরক্ত? জিবরাঈল বললেন, হে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাকারাতুল মউতের অবস্থায় আমি আপনাকে কিভাবে দেখে সহ্য করতে পারি!
ভয়াবহ ব্যাথায় রাসূল ছোট্ট একটা গোঙানি দিলেন। রাসূলুল্লাহ বললেন, হে আল্লাহ সাকারাতুল মউতটা (জান কবজের সময়) যতই ভয়াবহ হোক, সমস্যা নেই, আমাকে সকল ব্যথা দাও আমি বরণ করবো, কিন্তু আমার উম্মাতকে ব্যথা দিওনা। রাসূলের শরীরটা ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে আসতে লাগলো। তার পা, বুক কিছুই নড়ছে না এখন আর। রাসূলের চোখের পানির সাথে তার ঠোঁটটা কম্পিত ছিলো, তিনি কিছু বলবেন মনে হয়।
হযরত আলী (রাঃ) তার কানটা রাসূলের মুখের কাছে নিয়ে গেলো। রাসূল বললেন, নামাজ কায়েম করো এবং তোমাদের মাঝে থাকা দূর্বলদের যত্ন নিও। রাসূলের ঘরের বাইরে চলছে কান্নার আওয়াজ, সাহাবীরা একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে উচ্চস্বরে কান্নারত। হযরত আলী (রাঃ) আবার তার কানটা রাসূলের মুখের কাছে ধরলো, রাসূল চোখ ভেজা অবস্থায় বলতে থাকলেন, ইয়া উম্মাতি, ইয়া উম্মাতি, "হে আমার উম্মতেরা নামাজ, নামাজ..! নামাজ..!!
সাহাবায়ে কিরামের রাসূল-প্রেম
হৃদয় ছোঁয়া দুইটি দৃষ্টান্তঃ
.
মুহাম্মদ আল-ফারুক সুমন
ঘটনা – ১:
ইসলামের সূচনালগ্নের কথা। তখন
মাত্র ঊনচল্লিশজন লোক ইসলাম গ্রহণ
করেছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের
অনুমতিক্রমে হযরত আবু বকর রা.
প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করলেন।
প্রথম যেদিন বক্তৃতা করলেন সেদিনই
মুশরিকদের গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো,
হিংস্র হায়েনার মতো ঝাপিয়ে
পড়ল ওরা হযরত আবু বকর রা. এর উপর। ক্ষত-
বিক্ষত করে দিলো সারা শরীর।
দীর্ঘ সময় বেহুঁশ হয়ে পড়ে থাকলেন
তিনি। তারপর সম্বিত ফিরে পাওয়া
মাত্রই প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন
প্রিয় নবীজি কেমন আছেন? তার
মমতাময়ী মা পুত্রকে কিছু খাওয়ার
জন্য অনেক অনুরোধ করলেন। কিন্তু হযরত
আবু বকর রা. শপথ করে বললেন, নবীজির
সাক্ষাত লাভের পূর্বে কোন আহার
গ্রহণ করবেন না। এরপর রাতে লোক
চলাচল বন্ধ হলে পরম মমতাময়ী মাতা
পুত্রকে নিয়ে প্রিয় নবীজির
খেদমতে উপস্থিত হলেন। প্রিয়নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম আবু বকর রা. কে দেখে
তাকে জড়িয়ে ধরলেন। হযরত আবু বকরও
রা. তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। এভাবে
জড়াজড়ি করে তারা উভয়ে খুব
কাঁদলেন, কাঁদলো উপস্থিত সকল
মুসলমান। এটাই হলো সত্যিকারের
ভালোবাসা। যে ভালোবাসার
কাছে খাদ্য, চিকিৎসা এমনকি পরম
মমতাময়ী মায়ের স্নেহ-
ভালোবাসাও হার মানে!
ঘটনা – ২:
অহুদ যুদ্ধে মুসলিমগণ যখন বিপর্যয়ের
সম্মুখীন, তখন এক আনসারী মহিলা
যুদ্ধে জড়িত লোকজনের কাছে
ব্যাকুল হৃদয়ে জানতে চাইলেন,
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম কেমন আছেন? এক ব্যক্তি
বলল, তোমার পিতা শহীদ হয়ে
গেছেন। মহিলা শুধু ‘ইন্নালিল্লাহি
ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়ে
অসহ্য অস্থিরতায় আবারো জানতে
চাইলেন, প্রিয় নবীজি কেমন আছেন?
প্রিয় নবীর ভালোবাসার কাছে
যেন আপন পিতার শাহাদাতের
সংবাদও ম্লান হয়ে যাচ্ছে! এরপর এক
এক করে তাঁর স্বামী, ভ্রাতা ও
পুত্রের শাহাদাতের সংবাদ
জানানো হল তাঁকে। কিন্তু তিনি
ইন্নালিল্লাহি… উচ্চারণ করে
বারবার মানুষের কাছে শুধু
প্রিয়নবীর কথাই জিজ্ঞেস
করছিলেন। এক সময় তিনি শুনতে
পেলেন যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালো
আছেন। কিন্তু ব্যাকুল হৃদয় তাতেও
শান্ত হলো না। এরপর নবীজিকে
স্বচক্ষে দেখেই তবে শান্ত হলেন
সেই আনসারী মহিলা। এটাই হলো
প্রকৃত নবীপ্রেম। প্রিয়নবীর প্রতি
পবিত্র ভালোবাসা। যার উপমা
মেলে না এ পৃথিবীতে।
কুচকুচে কালো সাহাবী হযরত জাহেয রা.।
গ্রাম থেকে শাক- সবজি সংগ্রহ করে
শহরে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ
করতেন। খুব ভালোবাসতেন রাসূল সা.
তাঁকে। বলতেন “জাহেয আমাদের গ্রাম
আমরা জাহেযের শহর“।
একদিন তিনি উদোম শরীরে বাজারে
শাক-সবজি বিক্রি করছিলেন। রাসূল সা.
পিছন থেকে এসে তাঁর বোগলের নিচ
দিয়ে হাত ঢুকিয়ে ঘাড়কে এমন ভাবে
ধরলেন যেনো সে নড়তে না পারে।
ধরার সাথে সাথে তিনি স্বজোরে বলতে
লাগলেন, এই ! কে ধরেছো আমাকে?
ছাড়ো ! ছাড়ো বলছি ! এদিকে রাসূল সা.
ও ধরে রেখে বলতে লাগলেন, এই
গোলামকে কে ক্রয় করবে……? সুলভ মূল্যে
বেঁচে দিবো। রাসূল সা.-এর আওয়াজ শুনে
জাহেয রা. চুপ হয়ে গেলেন। রাসূলের
গায়ে ছিলো চাঁদর জড়ানো। হাত উঁচু করে
জাহেযকে ধরায় রাসূল সা. এর সিনা
মোবারক অনাবৃত হয়ে পড়েছিলো।
সুযোগ বুঝে জাহেয রা. নিজের নগ্ন
পিঠকে
রাসূলের সিনার সাথে মিলিয়ে চুপ করে
দাঁড়িয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ পর রাসূল সা.
তাঁকে ছেড়ে দিয়ে
জিজ্ঞেস করলেন, জাহেয ! তুমি চুপ হয়ে
গেলে যে? আবার আমার সিনার সাথে
তোমার পিঠ ঠেকিয়ে দিলে! জাহেয
রা. বললেন, ওগো প্রিয় রাসূল সা.
আমিতো নিঃস্ব । নিতান্তই হতদরিদ্র।
কোনো পুঁজি
নেই। হাশরের মাঠে যদি আল্লাহ আমাকে
জিজ্ঞেস করেন, জাহেয! আমার কাছে
কি এনেছো তুমি ?
জবাবে বলবো, প্রভূ ! উপস্থাপন করার মতো
কিছুই নেই। তবে, আমার পিঠখানা
পরীক্ষা করে দেখুন, তাতে তোমার
হাবীবের পরশ আছে। একথা শুনে
রাসূল সা. তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
.
.
আহ্ ! জাহেয রা. তো অন্তত রাসূল সা. এর
পরশ পেয়েছেন। আমাদের তো তাও নেই।
কোন সম্বল নেই। কোন পুঁজি নেই। রিক্ত
হাত।
শুন্য থলে। আমরা কী পেশ করবো তাঁর
কাছে। আমরা তো এমন হতভাগ্য যে,
আমাদের চোখ তাঁর হাবীবকে দেখেনি।
এমন দূর্ভাগা আমাদের নাক তাঁর ঘ্রাণ
নিতে পারেনি। এমন বঞ্চিত তাঁর সাথে
এক পথে চলতে পারিনি। আমরাতো এমন
রিক্ত যে , আমাদের হাত তাঁকে ছুঁতে
পারেনি। তবে আমাদের কী হবে? কী
আছে আমাদের?
হ্যাঁ আছে। আমাদের অন্তরে মদীনা অলার
প্রেম আছে। হৃদস্পন্দনে তাঁর অনুরাগ আছে।
প্রতি রক্তকনিকায় তাঁর ভালোবাসা
আছে। মহব্বত আছে। এই প্রেম আর
অনুরাগকেই আমরা প্রভুর সামনে পেশ
করবো সেদিন। প্রভু অন্তর্যামি। তিনি
দেখেন। বুঝেন। উপলব্ধি করেন।
.
হে প্রভু ! তাঁর ভালোবাসাকে পুঁজি করেই
জীবন কাটানোর তৌফিক দিন। তাঁর
পদাঙ্ক অনুস্মরণ করে আমরণ চলার তৌফিক
দিন।
মদীনা অলার প্রেমানলে জ্বলে জ্বলে
নিজকে নিঃশ্বেষ করার তৌফিক দিন।
আমীন!!!
পুনরুত্থানের দিন। জড়ো করা হয়েছে পূর্ববর্তী
ও পরবর্তীদের। অসহায়, সন্ত্রস্থ মানবজাতি।
অপেক্ষমান। চিন্তিত, অস্থির, অক্ষম। সেই দিন মানুষ
তাদের কষ্ট লাঘব করার জন্য আর্জি নিয়ে দুনিয়ার
রাজাদের কাছে যাবে না। দুনিয়ার শাসকদের কাছে
যাবে না। তারা ছুটে যাবে আল-আম্বিয়ার (নবীদের)
কাছে
– আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম।
.
মানুষ প্রথম ছুটে যাবে মানবজাতির পিতা আদমের
কাছে, আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম। তারা আদম (আঃ)-এর
কাছে গিয়ে বলবে – হে আদম! আপনি কি মানুষের
অবস্থা দেখছেন না? অথচ আল্লাহ্ আপনাকে নিজ
হাতে সৃষ্টি করেছেন। আপনাকে তিনি তাঁর
ফেরেশতাগণ দিয়ে সাজদাহ্ করিয়েছেন। আর
আপনাকে সব জিনিসের নাম শিখিয়েছেন। কাজেই
আপনি আমাদের
রাব্বের কাছে সুপারিশ করুন, যেন এ স্থান থেকে
আমাদেরকে তিনি স্বস্তি দেন।
.
আদম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম বলবেন - এ
কাজের জন্য আমি উপযুক্ত নই।
.
আমাদের পিতা আদম নিজের ভুলের কথা স্মরণ
করবেন এবং মানুষকে বলবেন মানবজাতির প্রতি
প্রেরিত প্রথম রাসূল নূহ্- এর কাছে যেতে,
আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম।।
.
তারা নূহ্ এর কাছে যাবে। তিনিও বলবেন, আমি
তোমাদের
এ কাজের উপযুক্ত নই। তিনি তাঁর কৃত ভুলের কথা
স্মরণ করবেন, এবং মানুষকে বলবেন আল্লাহর
খলীল ইব্রাহীমের কাছে যেতে, আলাইহিস
সালাতু ওয়াস সালাম।
.
তারা ইব্রাহীমের আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম-এর
কাছে যাবে। তিনিও তাদের কাছে স্বীয় ভুলের
কথা উল্লেখ করে বলবেন- আমি তোমাদের এ
কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা বরং মূসার কাছে যাও।
তিনি এমন এক বান্দা যাঁকে আল্লাহ্ তাওরাত
দিয়েছিলেন এবং
তাঁর সঙ্গে তিনি সরাসরি কথা বলেছিলেন।
.
তারা তখন মূসা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম-এর কাছে
যাবে। তিনিও বলবেন, আমি তোমাদের এ কাজের
যোগ্য নই। তাদের কাছে তিনি নিজের ভুলের কথা
উল্লেখ করবেন, এবং বলবেন, তোমরা বরং ‘ঈসা-
এর কাছে যাও। যিনি আল্লাহর বান্দা, তাঁর রাসূল, কালেমা
ও রূহ, আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম।
.
তখন তারা ‘ঈসা -র কাছে
যাবে। তখন ‘ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম বলবেন,
আমি তোমাদের এ কাজের উপযুক্ত নই। তোমরা
বরং মুহাম্মাদ ﷺ এর
কাছে যাও। তিনি এমন এক বান্দা, যাঁর আগের ও
পরের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়েছে।
.
আদম, নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ‘ঈসা – আলাইহিমুস সালাতু
ওয়াস সালাম। তাঁরা কেউ সুপারিশ করতে সাহস করবেন
না। প্রত্যেক নবী নিজেদের অক্ষমতার কথা
প্রকাশ করবেন। .
তারপর...সবাই মুহাম্মাদ
ﷺ এর কাছে যাবে।
তিনি তাঁর রাব্বের কাছে অনুমতি চাইবেন এবং তাঁকে
অনুমতি দেয়া হবে। তিনি তাঁর রাব্বের সামনে
সিজদাবনত হবেন। আসমান ও যমীনের একচ্ছত্র
অধিপতি, বিচারদিনের মালিক আল্লাহ ‘আযযা ওয়া
জাল যতোক্ষন ইচ্ছে করবেন ততোক্ষন
মুহাম্মাদ
ﷺ সেই অবস্থায়
থাকবেন।
.
তারপর তাঁকে ﷺ
বলা হবে:
.
হে মুহাম্মাদ! মাথা ওঠান। বলুন, শোনা হবে। চান,
দেয়া হবে। সুপারিশ করুন, গ্রহণ করা হবে। .
মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর
রাব্বের শিখিয়ে দেয়া প্রশংসার দ্বারা তাঁর প্রশংসা
করবেন, এবং বলবেন:
.
“উম্মাতি, উম্মাতি” (আমার উম্মাহ, আমার উম্মাহ)
.
সমগ্র মানবজাতি, এমনকি নবীগণ আলাইহিমুস সালাতু
ওয়াস সালাম নিজ নিজ অবস্থা নিয়ে সন্ত্রস্থ থাকবেন।
সবাই ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি করতে থাকবে। মুহাম্মাদ
ﷺ বলবেন – আমার
উম্মাহ, আমার উম্মাহ।
.
এটা সেই মানুষটা যার সুন্নাহকে আজ আমরা তুচ্ছ
করছি। সেই মানুষটা যার অপমান, অবমাননা আমরা নির্বিকার
ভাবে সয়ে যাচ্ছি, দরকষাকষির জন্য, সনদ আর
স্বীকৃতির জন্য ব্যবহার করছি। যার আনীত
শারীয়াহকে আমরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছি। যার
পছন্দনীয় বিষয়ের চাইতে সমাজের স্ট্যান্ডার্ড,
আর ট্রেন্ড ফলো করা আমাদের চাইতে বেশি
প্রিয়।
.
এটা হল সেই মানুষটা যিনি গভীর রাতে নামাযে
দাড়িয়ে আপনার আর আমার কথা চিন্তা করে কাঁদতেন।
যিনি বারবার আল্লাহর কাছে তাঁর উম্মাহর জন্য ক্ষমা
প্রার্থনা করতেন। এটা হল সেই মানুষটা যিনি মৃত্যুশয্যায়
বারবার বলছিলেন – আমার উম্মাহ, আমার উম্মাহ। সেই
মানুষটা যিনি আমাদের দেখেননি কিন্তু আমাদের জন্য
বারবার চিন্তিত হয়েছেন, কান্না করেছেন, দুয়া
করেছেন। এটা হল সেই মানুষটা যিনি সুপারিশ
করবেন, সেই ভয়ঙ্কর দিনে। তাঁর উম্মাহর জন্য।
আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম ‘আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদ।
.
এই মানুষটার কথা স্মরণ করুন। যেই মহান সত্ত্বা
তাকে প্রেরণ করেছেন তাঁর ব্যাপারে সচেতন
হোন। নিজের পরিবার, আর প্রাণের জন্য
ভালোবাসাকে এক পাল্লায় তুলুন আর মৃত্যুশয্যায় ‘ইয়া
উম্মাতি, ইয়া উম্মাতি’ বলতে থাকা এই মানুষটার জন্য
আপনার মনে যে ভালোবাসা
আছে সেটাকে অন্য পাল্লায় রাখুন। সনদ, স্বীকৃতি,
সুনাম, শান্তিকে এক পাল্লায় তুলুন আর রাসূলুল্লাহর
সম্মানের প্রশ্নকে আরেক পাল্লায় তুলুন। পুরো
পৃথিবীকে এক পাল্লায় তুলুন আর মুহাম্মাদ ইবনু
আবদুল্লাহ ﷺ কে আরেক
পাল্লায় তুলুন। আর বিচার করুন আপনি আসলে
রাসূলুল্লাহকে
ﷺ কতোটুকু
ভালোবাসেন। নিজেকে প্রশ্ন করুন এই
রাসূলুল্লাহর
ﷺ প্রতি দায়িত্ব
আপনি কতোটুকু পালন করেছেন। যখন তাঁকে

আক্রমন করা হয়েছে তখন আপনি কি করেছেন?
চিন্তা করুন যদি হাশরের দিন তাঁর
ﷺ সাথে আপনার
দেখা হয়, আর এই প্রশ্নগুলো তিনি
ﷺ আপনাকে
করেন তাহলে কি জবাব
দেবেন?
উহুদ যুদ্ধ, মুসলমানদের জয় বিপর্যয়ে পরিণত
হবার পরের মুহূর্ত। রাসূল (সাঃ) তখন যুদ্ধের
কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন। পেছন থেকে
শত্রুর
আকস্মিক আক্রমণে বিজয়-আনন্দরত মুসলিম
সৈন্যরা একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে
এগিয়ে আসতে পারল না। বিশৃঙ্খল হয়ে
পড়েছে তারা।
মুষ্টিমেয় মুসলিম সৈন্যের ছোট্ট একটি দল
মহানবী (সাঃ) কে কেন্দ্র করে দাঁড়িয়ে।
মক্কার মুশরিক সৈন্যরা একে মহাসুযোগ
হিসেবে গ্রহণ করল। মহা আস্ফালনে চারদিক
কাঁপিয়ে মুশরিক সৈন্যরা ঝড়ের বেগে
অগ্রসর হলো রাসূল (সাঃ) কে লক্ষ্য করে। এই
ঝড় প্রতিহত করতে হলে এর চেয়েও দুরন্ত
গতির আরেক ঝড় প্রয়োজন।
মহানবী (সা) তাঁকালেন তাঁর চারদিকের
সাথীদের দিকে। ধ্বনিত হলো তাঁর
তেজদীপ্ত গম্ভীর কন্ঠ, 'নিজের প্রাণ উৎসর্গ
করে শত্রুর গতির

No comments:

Post a Comment