নবী প্রেমে কাদঁতে চাইলে ঘটনাটি পড়ুন
==============
একবার সাহাবী হযরত জাবের (রা) প্রিয়নবী (সাঃ)
এর কাছে আরজ করলেনঃ
"ইয়া রাসূলুল্লাহ্ !দয়া করে এই গোলামের
বাড়িতে দাওয়াত কবুল করে নিন"
রাসুল (সাঃ) তাঁর দাওয়াত কবুল করে নিলেন।
জাবের (রা) খুশীতে আত্মহারা হয়ে বাড়িতে
চলে গেলেন । বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী
ও পুত্রদের সুসংবাদ দিলেনঃ আজ আমাদের
ভাগ্য খুলে গেছে "রাহমাতুল্লিল আলামিন"
দয়া করে আমাদের বাড়িতে তশরীফ নিবেন ।
এর চেয়ে আনন্দের ব্যাপার আমাদের জীবনে
আর কি হতে পারে!!! তিনি তাঁদেরকে নিয়ে
মহানন্দে নবীজীকে আপ্যায়ন করার
আয়োজনে
লেগে গেলন । বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
করে সুন্দরভাবে সাজালেন । সুগন্ধী দ্রব্য
ছিটিয়ে ঘরকে সুবাসিত করলেন-ঘরে পালিত
খাসী জবাই করলেন। বড় ছেলে আবদুল্লাহকে
নিয়ে খাসী জবাই করে নিজ হাতে তার
চামড়া ছাড়িয়ে সুন্দর করে মাংস টুকরো টুকরো
করে নিলেন । অত:পর স্ত্রীর কাছে মাংস
নিয়ে বললেন,যত্ন করে মাংসের টুকরোগুলো
ভুনা করে নাও । স্ত্রীকে এ কথা বলে হযরত
জাবের (রা) বাড়ী-ঘর তদারকি করতে
লাগলেন,কোথাও কোন কাজ বাকী রয়ে গেল
কি-না । মাঝে মাঝে রান্না ঘরে গিয়ে
দেখেন-রান্না আর কতদূর হয়েছে; আবার
বাড়ীর সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখেন-
নবীজী আসছেন কি-না । ইতিমধ্যে হযরত
জাবের (রা) এর ছোট ছেলে ঘুম থেকে উঠে
খাসী তালাশ করতে লাগলো । তারা দুই ভাই
মিলে খাসীটিকে আদর-যত্ন করে লালন -পালন
করতো ।বড় ভাই তাকে জানাল প্রিয়নবির
মেহমানদারী করার জন্য খাসীটিকে জবাই
করা হয়েছে । ছোট ভাই বায়না ধরলো-খাসী
কিভাবে জবাই করেছে আমাকে দেখাও ।
অগত্যা বড় ভাই ছুরি হাতে করে ঘরের পেছনে
গিয়ে বললো, এখানে খাসী জবাই করা
হয়েছে । ছোট ভাই জানতে চাইলো
কিভাবে ? বর্ণনা করে বোঝতে না পেরে
অবশেষে বড় ভাই বললো,, তাহলে তুমি
মাটিতে শুয়ে পড় । আমি তোমাকে দেখাই ।
ছোট ভাই মাটিতে শোয়ার পর বড় ভাই তার
গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করার নমুনা
দেখাতে গিয়ে ছোট ভাইকে সত্যি সত্যি
জবাই করে ফেললো । বড় ভাই যখন দেখলো,,
ছোট ভাইয়ের গলা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
সে ছটফট করতে করতে এক সময় নিস্তেজ
হয়ে
গেছে, তখন বুঝলো ব্যাপারটি কি ঘটেছে ।
আতঙ্কিত হয়ে সে নিকটবর্তী এক খেজুর
গাছের
চূড়ায় উঠে আত্মগোপন করে রইলো। এদিকে
হযরত
জাবের (রা) পুত্রদের খোজে বাড়ীর পেছনে
এসে ছোট ছেলের অবস্থা দেখে থমকে
গেলেন । অত:পর তাকে বুকে করে স্ত্রীর
কাছে
গিয়ে বললেনঃতাড়াতড়ি একটি কম্বল নিয়ে
এসো, বাচ্চাটিকে শুইয়ে দিই । স্ত্রী
সন্তানের রক্তমাখা লাশ দেখে চিৎকার করে
কাঁদতে লাগলেন। কিন্ত স্বামী তাকে
সান্ত্বনা দিয়ে বললেনঃ আজ আমাদের শোক
প্রকাশ করার দিন নয়।আমাদের দুঃখ দেখলে
নবীজীও দুঃখিত হবেন । অতএব,ধৈর্য ধারণ করো
। মুখে হাসি ফুটিয়ে তোল । তারপর তাঁরা
দু’জনে মিলে ছোট ছেলেকে কম্বল মুড়ে
রান্নঘরের পেছনে রেখে আসলেন । স্ত্রী
রান্নার কাজে মন দিলেন । জাবের (রা) বের
হলেন বড় পুত্র আবদুল্লাহর খোজে । বাড়ীর
পেছনে গিয়ে ছেলের নাম ধরে জোরে হাঁক
দিলেন । গাছের উপর আত্মগোপন করে বড়
ছেলে সব ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিল।আর ভয়ে
কাঁপছিল । পিতার ডাক শুনে ভাবলো,, এখন
পালাতে না পারলে আব্বার হাতে ধরা
পড়তে হবে । ধরা পড়লে আর রক্ষা থাকবেনা ।
পালানোর উদ্দেশ্যে গাছ থেকে লাফিয়ে
পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সেও মৃত্যুর কোলে
ঢলে
পড়লো । পিতা কাছে গিয়ে গায়ে হাত
দিয়ে দেখেন,,আবদুল্লা
হর দেহে প্রাণের স্পন্দন নেই !! বড় ছেলে
কে
কোলে তুলে তিনি বাড়ীর ভিতরে আসলেন ।
স্ত্রীকে বললে,, আর একটি কম্বল নিয়ে আসার
জন্যে । বড় ছেলের অবস্থা দেখে মাতা পুনরায়
আর্তনাদ করে উঠলেন । স্বামী তাকে পুনরায়
সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,ধৈর্য্য ধরো । আজ
আমাদের দুঃখ প্রকাশের দিন নয় । আজ আমাদের
পরম আনন্দের দিন । তারপর দু’জনে মিলে বড়
ছেলের লাশও কম্বলে মুড়ে ছোট ছেলের
লাশের পাশে রাখলেন ।স্বামী-স্ত্রী তদের
চোখের পানি মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেন
। যাঁর ”নূরে” সমগ্র মাখলুকাত পয়দা,সেই
রাহমাতাল্লিল আলামীনের সামনে অশ্রু
বিসর্জন দিলে তিনি দুঃখ পাবেন । তাই
আনন্দিত হয়ে তাঁরা নিজেদের কাজ নিয়ে
ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । হযরত জাবের (রা) বাড়ীর
সামনে দাড়িয়ে নবীজীর আগমনের অপেক্ষা
করতে লাগলেন । অল্পক্ষণের মধ্যে
নবীজীকে
উটের পিঠে করে আসতে দেখা গেলো ।
হযরত
জাবের (রা) আনন্দে আত্মহারা হয়ে দৌড়ে
গিয়ে স্ত্রীকে নবীজীর আগমনের সংবাদ
দিলেন । পুনরায় তিনি দৌড়ে বাড়ীর সামনে
চলে এলেন । নবীজীর উটের কাছে গিয়ে
তাঁকে বাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে আনলেন নবীজী
জাবের (রা) এর ঘরের সামনে উট থামিয়ে তাঁর
ডান পা মোবারক মাটিতে রাখলেন,বাম পা
মোবারক এখনো নামাতে বাকী । এমন সময়
জিব্রাইল (আ) আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ
নিয়ে উপস্হিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আল্লাহ্ আপনাকে জাবেরের ছেলেদেরকে
সংগে নিয়ে খানা খেতে বলেছেন । অতঃপর
নবীজী সাহাবায়েকেরামকে নিয়ে জাবের
(রা) এর ঘরে তশরীফ নিলেন ।তাদের সামনে
জাবের (রা) দস্তরখানা বিছিয়ে দিলেন তার
স্ত্রী খাবার বেরে দিলেন আর তিনি
সেগুলো এনে মেহমানদের সামনে হাজির
করলেন তারপর তিনি নবীজীকে আরজ
করলেন,
ইয়া রাসূলুল্লাহ্! বিস্মল্লাহ্ করুন নবীজী বললেন,
হে জাবের ! তোমার ছেলেরা কোথায় ?
তাদেরকে ডাক হযরত জাবের (রা) বললেন, ইয়া
হাবীবাল্লাহ! আপনি দয়া করে খেয়ে নিন।
ছেলেদেরকে আমি পরে ডাকবো। হযরত রাসূল
(সাঃ) পুনরায় বললেন তোমার ছেলেদের
ডেকে
নিয়ে এসো তাদেরকে সাথে নিয়ে খানা
খাবো। হযরত জাবের ও তার স্ত্রী হাত জোড়
করে পুনরায় আরজ করলেন ,ইয়া রাসূললুল্লাহ !
আপনি খানা খেয়ে নিন আমরা তাদেরকে
ডেকে দিচ্ছি তখন নবীজী বললেন, হে
জাবের ! এইমাত্র জিব্ররাইল ফেরেশতা
আমাকে আল্লাহর নির্দেশ জানিয়ে
গেলেন,,আমি যেন তোমার ছেলেদেরকে
সাথে নিয়ে খানা খাই নবীজীর একথা শুনে
হযরত জাবের [রা] ও তার স্ত্রী আর ধৈর্য্য ধারণ
করতে পারলেনা ।তারা হাউমাউ করে কেদে
বললেন ইয়া রাসূলূল্লাহ্! ছেলেদেরকে কোথায়
পাবো ? তারা তো জগতে বেঁচে নেই
নবীজী
জানতে চাইলেন ,তাদের কি হয়েছে ?তখন
তারা নবীজীকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন
তাদের দুঃখের কাহিনি শুনে
সাহাবায়েকেরামও কাঁদতে শুরু করলেন ।
নবীজীর প্রেমিক হযরত জাবের (রা) ও তার
স্ত্রীর ঘটনা শুনে অনেকে চিল্লাচিল্লি করে
মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকেন তারপর
নবীজী উঠে দাঁড়িয়ে হযরত জাবের (রা) কে
বললেনঃ তাদেরকে কোথায় রেখেছো??
সেখানে আমাকে নিয়ে চলো। হযরত জাবের
(রা) নবীজীকে রান্না ঘরের পেছনে নিয়ে
গেলন।খোদ রাসূল (সাঃ) কম্বলাবৃত দুই ছেলের
মৃতদেহের উপর তাঁর দুই হাত মোবারক রেখে
বললেন, হে জাবেরের ছেলেরা! তোমরা কি
দেখ না, তোমাদের আব্ব-আম্মা আল্লাহর
নবীকে কত ভালোবাসেন!! আমি মনে কষ্ট
পাবো বলে তোমাদের কথা তারা আমাকে
জানায়নি । তোমরা শীঘ্রই ওঠ, তোমাদেরকে
সঙে করে আমি খানা খাবো । এ কথা বলে
নবীজী যখন তাদের. দেহ থেকে কম্বল
সরিয়ে
দিলে,, সংগে সংগে তারা দু’জন উঠে
নবীজীর কদম মোবারক জড়িয়ে ধরলো । তখন
নবীজীর প্রেমে কেউ সুস্থীর ছিলেন না ।
সবাই কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশের মতো হয়ে
গেলন। পরিস্থিতি শান্ত হলে নবীজী (সাঃ) হযরত
জাবের (রা) এর দুই ছেলেকে নিয় খানা
খেতে বসলেন ।
সবাইকে বললেন , মাংস খাবার পর হাড়
চিবিয়ে না খেয়ে তা জমা করে রাখার
জন্যে।
এভাবে সবার খাওয়া শেষ হলে নবীজী তাঁর
পবিত্র হাত মোবারক হাড়ের ওপর রেখে
বললেন, ওহে জাবেরের খাসী! তুমি কি
দেখো না তোমার মনিব আল্লাহর নবীকে
কতখানি ভালোবাসেন?? তুমি পুনরায় তোমার
মনিবের হয়ে যাও।
প্রিয়নবি এ কথা বলার সাথে সাথে খাসী
জীন্দা হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে গেলো ।
-সুবহান আল্লাহ -


No comments:
Post a Comment