১) নামায হল সর্বোত্তম আমল
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রশ্ন করা হল,
أَىُّ الأَعْمَالِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ قَالَ الصَّلاَةُ عَلَى وَقْتِهَا
কোন আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বললেন, সময়মত সালাত আদায় করা।[87]
২) নামায বান্দা এবং প্রভুর মাঝে সম্পর্কের মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ فِى الصَّلاَةِ فَإِنَّهُ يُنَاجِى رَبَّهُ
তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করে, তখন সে তার পালনকর্তার সাথে গোপনে কথা বলে।[88]
৩) নামায দ্বীনের খুঁটি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
رَأْسُ الأَمْرِ الإِسْلاَمُ وَعَمُودُهُ الصَّلاَةُ وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الْجِهَادُ
সবকিছুর মূল হচ্ছে ইসলাম। আর ইসলামের মূল স্তম্ভ হচ্ছে সালাত এবং ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে জিহাদ।[89]
৪) সালাত হচ্ছে আলোকবর্তিকা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
وَالصَّلاَةُ نُورٌ
সালাত হচ্ছে (কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য) নূর বা আলোকবর্তিকা।[90]
৫) সালাত হচ্ছে মুনাফেকী থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَيْسَ صَلاَةٌ أَثْقَلَ عَلَى الْمُنَافِقِينَ مِنَ الْفَجْرِ وَالْعِشَاءِ ، وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
মুনাফেকদের উপর ফজর ও ইশা নামাযের চেয়ে অধিক ভারী কোন নামায নেই। তারা যদি জানত এ নামাযের মধ্যে কত ছোয়াব রয়েছে, তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত। [91]
৬) সালাত জাহান্নাম হতে মুক্তির গ্যারান্টি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَنْ يَلِجَ النَّارَ أَحَدٌ صَلَّى قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا
কখনই জাহান্নামে প্রবেশ করবে না এমন ব্যক্তি যে, সূর্যোদয়ের পূর্বে সালাত আদায় করেছে এবং সূর্যাস্তের পূর্বে সালাত আদায় করেছে। অর্থাৎ- ফজর ও আসর সালাত।[92]
৭) নিশ্চয় সালাত মানুষকে অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে
আল্লাহ তাআলা বলেন,
আল্লাহ তাআলা বলেন,
اتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنَ الْكِتَابِ وَأَقِمِ الصَّلَاةَ إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ
কুরআনের যা আপনার কাছে ওহী করা হয়েছে তা পাঠ করুন এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করুন। নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও গর্হিত বিষয় থেকে বিরত রাখে। [93]
৮) সালাত সকল কাজে সাহায্য লাভের মাধ্যম
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ
তোমরা ধৈর্য এবং সালাতের মাধ্যমে (আল্লাহর তাআলার কাছে) সাহায্য প্রার্থনা কর।[94]
৯) একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে জামাআতে আদায় করা অনেক উত্তম
রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
صَلاَةُ الْجَمَاعَةِ تَفْضُلُ صَلاَةَ الْفَذِّ بِخَمْسٍ وَعِشْرِينَ دَرَجَةً
একাকী সালাত আদায় করার চেয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা পঁচিশ গুণ বেশী মর্যাদা সম্পন্ন।[95]
১০) ফেরেশতাগণ মুছল্লীদের জন্য মাগফেরাত ও রহমতের দুআ করেন
রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ أَحَدَكُمْ فِى صَلاَةٍ مَا دَامَتِ الصَّلاَةُ تَحْبِسُهُ ، وَالْمَلاَئِكَةُ تَقُولُ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ . مَا لَمْ يَقُمْ مِنْ صَلاَتِهِ أَوْ يُحْدِثْ
তোমাদের কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করার পর যতক্ষণ ¯^xq স্থানে (জায়নামাজে) বসে থাকে ততক্ষণ অযু ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতাগণ মুছল্লীদের জন্য দুআ করে থাকেন। বলেন, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন, তাকে রহম করুন।[96]
১১) সালাত গুনাহ মাফের মাধ্যম
রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَوَضَّأَ لِلصَّلاَةِ فَأَسْبَغَ الْوُضُوءَ ثُمَّ مَشَى إِلَى الصَّلاَةِ الْمَكْتُوبَةِ فَصَلاَّهَا مَعَ النَّاسِ أَوْ مَعَ الْجَمَاعَةِ أَوْ فِى الْمَسْجِدِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ ذُنُوبَهُ
যে ব্যক্তি সালাতের জন্য অযু করবে এবং অযু পরিপূর্ণরূপে সম্পাদন করবে, তারপর ফরয নামায আদায় করার জন্য পথ চলবে;অতঃপর তা মানুষের সাথে জামাআতে বা মসজিদে আদায় করবে, তাহলে আল্লাহ তার গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন।[97]
১২) সালাতের মাধ্যমে শরীর থেকে গুনাহগুলো বের হয়ে যায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ مِنْهُ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسَ مَرَّاتٍ هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ قَالُوا لاَ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَىْءٌ قَالَ فَذَلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللَّهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
তোমরা কি মনে কর, তোমাদের কারো ঘরের সামনে যদি একটি নদী প্রবাহিত থাকে এবং প্রতিদিন সে উহাতে পাঁচবার গোসল করে, তবে তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে কি? তাঁরা (সাহাবাগণ) বললেন: কোন ময়লাই বাকী থাকতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: এরূপ উদাহরণ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ক্ষেত্রেও। এভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা নামাযীর যাবতীয় (ছোট) পাপগুলো মোচন করে দেন।[98]
১৩) সালাতের জন্য মসজিদে গমন করলে এক পদে পাপ মোচন হয় এবং অন্য পদে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَطَهَّرَ فِى بَيْتِهِ ثُمَّ مَشَى إِلَى بَيْتٍ مِنْ بُيُوتِ اللَّهِ لِيَقْضِىَ فَرِيضَةً مِنْ فَرَائِضِ اللَّهِ كَانَتْ خَطْوَتَاهُ إِحْدَاهُمَا تَحُطُّ خَطِيئَةً وَالأُخْرَى تَرْفَعُ دَرَجَةً
যে ব্যক্তি নিজ গৃহে অযুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর আল্লাহর কোন ঘরে (মসজিদে) যায় আল্লাহ তাআলার কোন একটি ফরজ সালাত আদায় করার জন্য, তবে তার প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একটি পদে একটি পাপ মোচন করা হয় এবং অন্য পদে একটি মর্যাদা উন্নীত হয়।[99]
১৪) আগেভাগে সালাতে আসার মর্যাদা
রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِى النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوا إِلاَّ أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاَسْتَهَمُوا وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِى التَّهْجِيرِ لاَسْتَبَقُوا إِلَيْهِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِى الْعَتَمَةِ وَالصُّبْحِ لأَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا
মানুষ যদি জানত আজান দেয়া এবং প্রথম কাতারে সালাত আদায় করার মধ্যে কি ছোয়াব নিহিত আছে, তাহলে (কে আজান দিবে বা কে প্রথম কাতারে সালাত আদায় করবে তা নির্ধারণ করার জন্য) তারা পরস্পর লটারি করতে বাধ্য হত। তারা যদি জানত আগেভাগে সালাতে আসাতে কি প্রতিদান রয়েছে তবে, তারা প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ত। আর যদি জানত ইশা ও ফজর নামাযে কি পরিমান ছোয়াব রয়েছে তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে উপস্থিত হত।[100]
১৫) সালাতের জন্য অপেক্ষাকারী যেন সালাতেই রত থাকে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لاَ يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِى صَلاَةٍ مَا دَامَتِ الصَّلاَةُ تَحْبِسُهُ لاَ يَمْنَعُهُ أَنْ يَنْقَلِبَ إِلَى أَهْلِهِ إِلاَّ الصَّلاَةُ
তোমাদের কোন ব্যক্তি সালাতেই রত থাকে যতক্ষণ সালাত তাকে বাঁধা দিয়ে রাখে। শুধু সালাতই তাকে নিজ গৃহে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখে।[101]
১৬) সালাতে আমীন বলার দ্বারা পূর্বের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِذَا قَالَ أَحَدُكُمْ آمِينَ . وَقَالَتِ الْمَلاَئِكَةُ فِى السَّمَاءِ آمِينَ . فَوَافَقَتْ إِحْدَاهُمَا الأُخْرَى ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
তোমাদের কোন ব্যক্তি যখন (সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে) ‘আমীন’ বলে। আর ফেরেশতারা আসমানে বলে ‘আমীন’। তাদের একজনের আমীন বলা অন্য জনের সাথে মিলে গেলে তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়।[102]
১৭) সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর তাআলার নিরাপত্তা লাভ করা যায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى صَلاَةَ الصُّبْحِ فَهْوَ فِى ذِمَّةِ اللَّهِ فَلاَ يَطْلُبَنَّكُمُ اللَّهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَىْءٍ
যে ব্যক্তি সকালের (ফজর) সালাত আদায় করে সে আল্লাহর যিম্মাদারিতে হয়ে যায়। আর আল্লাহ যেন তার যিম্মাদারিতে তোমার কাছে কিছু চেয়ে না বসেন।[103]
১৮) সালাতের দ্বারা কিয়ামত দিবসে পরিপূর্ণ নূর লাভ করা যায়
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
بَشِّرِ الْمَشَّائِينَ فِى الظُّلَمِ إِلَى الْمَسَاجِدِ بِالنُّورِ التَّامِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যারা অন্ধকারে (ফজর ও ইশা সালাত আদায় করার জন্য) মসজিদে গমন করে, তাদেরকে কিয়ামত দিবসে পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দিয়ে দাও।[104]
১৯) সালাত শয়তান থেকে নিরাপদ রাখার মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَا مِنْ ثَلاَثَةٍ فِى قَرْيَةٍ وَلاَ بَدْوٍ لاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إِلاَّ قَدِ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّمَا يَأْكُلُ الذِّئْبُ الْقَاصِيَةَ
কোন গ্রামে যদি তিনজন লোক থাকে এবং তারা জামাআতের সাথে সালাত প্রতিষ্ঠা না করে তবে শয়তান তাদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। সুতরাং তোমরা জামাআত বদ্ধ থাক। কেননা দল ছুটা একক ছাগলকে নেকড়ে বাঘ খেয়ে ফেলে।[105]
২০) আছর ও ফজর সালাত আদায়কারীর জন্য জান্নাতের সুসংবাদ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى الْبَرْدَيْنِ دَخَلَ الْجَنَّةَ
যে ব্যক্তি দু’ঠান্ডার সময়ের (আছর ও ফজর) সালাত আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[106]
২১) পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে যাওয়ার সুসংবাদ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الْمَسْجِدُ بَيْتُ كُلِّ تَقِيٍّ، وَقَدْ ضَمِنَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ لِمَنْ كَانَ الْمَسَاجِدُ بُيُوتَهُ الرَّوْحَ، وَالرَّحْمَةَ، وَالْجَوَازَ عَلَى الصِّرَاطِ إلَى رِضْوَانِ اللهِ إِلىَ الْجَنَّةِ
প্রত্যেক পরহেযগার ব্যক্তির গৃহ হচ্ছে মসজিদ। আর যে ব্যক্তির গৃহ মসজিদ আল্লাহর তার জন্য করুণা ও দয়ার জিম্মাদার হয়ে যান এবং আর যিম্মাদারি নেন পুলসিরাত পার হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টিসহ জান্নাতের যাওয়ার।[107]
২২) সালাত আদায়কারীর জন্য ফেরেশতারা সাক্ষ্য দান করে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الْمَلاَئِكَةُ يَتَعَاقَبُونَ، مَلاَئِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلاَئِكَةٌ بِالنَّهَارِ، وَيَجْتَمِعُونَ فِى صَلاَةِ الْفَجْرِ وَالْعَصْرِ، ثُمَّ يَعْرُجُ إِلَيْهِ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ، فَيَسْأَلُهُمْ وَهْوَ أَعْلَمُ ، فَيَقُولُ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِى فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ يُصَلُّونَ، وَأَتَيْنَاهُمْ يُصَلُّونَ
দিনে-রাতে ফেরেশতাদের আগমণ ঘটে। রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে একদল ফেরেশতার আগমণ ঘটে। ফজর সালাতে এবং আসর সালাতে পরস্পর মিলিত হয়। তারপর যে সকল ফেরেশতা রাতে তোমাদের নিকট আগমণ করেছিল তারা চলে যায়, তখন আল্লাহ তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন-অথচ তিনি সর্বাধিক জানেন-আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? তারা বলে, তাদেরকে রেখে এসেছি এমন অবস্থায় যে তারা সালাত আদায় করছে এবং তাদেরকে এমন অবস্থায় আমরা পেয়েছি যে তারা সালাত আদায় করছে। অন্য বর্ণনায় আছে, আমরা যখন তাদের কাছে যাই তখন তারা সালাতরত ছিল এবং যখন তাদেরকে ছেড়ে আসি তখনও তারা সালাতরত ছিল। সুতরাং তাদেরকে হিসাবের দিন ক্ষমা করুন।[108]
২৩) পূর্ণ রাত নফল সালাত আদায় করার ছোয়াব
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِى جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِى جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ
যে ব্যক্তি ইশা সালাত জামাআতের সাথে আদায় করল, সে যেন অর্ধ রাত্রি পর্যন্ত নফল সালাত আদায় করল এবং যে ব্যক্তি ফজর সালাত জামাআতের সাথে আদায় করল, সে যেন পূর্ণ রাত্রি নফল সালাত আদায় করল।[109]
২৪) সালাতই কিয়ামতের দিন আরশের নীচে ছায়া লাভের মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِى ظِلِّهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ-وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِى الْمَسَاجِدِ
কিয়ামত দিবসে সাত ধরণের ব্যক্তিকে আরশের নীচে ছায়া দান করা হবে যে দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না, তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে এমন ব্যক্তি যার হৃদয় লটকানো থাকে মসজিদে। অর্থাৎ যখনই সালাতের সময় হয় সে ছুটে যায় মসজিদের পানে।[110]
২৫) সালাত মুনাফেকী ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাধ্যম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِى جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ بَرَاءَةٌ مِنَ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنَ النِّفَاقِ
যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন জামাআতের সাথে ইমামের তাকবীরে তাহরীমার সাথে সালাত আদায় করবে তার জন্য দুটি মুক্তি নামা লিখা হবে।
১) জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং
২) মুনাফেক্বী থেকে মুক্তি।[111]
১) জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং
২) মুনাফেক্বী থেকে মুক্তি।[111]
বেনামাযী ও নামাযে অলসতাকারীর অবস্থাঃ
ইচ্ছাকৃতভাবে যে ব্যক্তি একেবারেই নামায ছেড়ে দিবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যাবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ
আমাদের মাঝে ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে অঙ্গিকার হল নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিবে সে কাফের হয়ে যাবে।[112]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন,
إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ
আল্লাহর বান্দা এবং কাফের-মুশরেকের মধ্যে পার্থক্য হল নামায ছেড়ে দেয়া।[113]
তবে যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে অলসতা করবে চাই সে অলসতা যথাসময়ে আদায় না করার মাধ্যমে হোক বা ঘুমের মাধ্যমে হোক কিংবা শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে নামায আদায়ে ত্রুটির মাধ্যমে হোক, সে কাফের না হলেও তার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির হুমকি রয়েছে।
সহীহ বুখারীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ¯^‡cœi দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,
وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِصَخْرَةٍ وَإِذَا هُوَ يَهْوِي بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ فَيَثْلَغُ رَأْسَهُ فَيَتَهَدْهَدُ الْحَجَرُ هَا هُنَا فَيَتْبَعُ الْحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ فَلَا يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأْسُهُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى
আমরা এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আসলাম। তার মাথার কাছে পাথর হাতে নিয়ে অন্য একজন লোক দাড়িয়ে ছিল। দাড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মাথায় সেই পাথর নিক্ষেপ করছে। পাথরের আঘাতে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং পাথরটি বলের মত গড়িয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছ্ে। লোকটি পাথর কুড়িয়ে আনতে আনতে আবার তার মাথা ভাল হয়ে যাচ্ছে। দাড়ানো ব্যক্তি প্রথমবারের মত আবার আঘাত করছে এবং তার মাথাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সফরসঙ্গী ফেরেশতাদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? উত্তরে তারা বললেনঃ এব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করেছিল। কিন্তু কুরআন অনুযায়ী আমল করেনি এবং সে ফরজ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকত। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
)فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ-الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ(
ধ্বংস ঐ সমস্ত নামাযীদের জন্যে যারা নামাযের ব্যাপারে উদাসীন।[114]
হাফেজ ইবনে কাছির (রহঃ) এই আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যায় বলেনঃ তারা হয়ত প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় না করে সব সময় বা অধিকাংশ সময় দেরী করে নামায আদায় করে থাকে। অথবা নামাযের রুকন ও শর্তসমূহ যথাযথভাবে আদায়ের ব্যাপারে গাফলতি করে থাকে অথবা তারা নামাযে মনোযোগ দেয় না এবং নামাযে কুরআন তিলাওয়াতের সময় তারা এর অর্থের মাঝে গবেষণা করে না।[115]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ
যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে কিয়ামতের দিন নামায তাঁর জন্য আলো, তার ঈমানের দলীল এবং নাজাতের উপায় হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে না কিয়ামতের দিন তার জন্যে কোন আলো থাকবে না, তার ঈমানের পক্ষে কোন প্রমাণ এবং তার নাজাতের কোন উপায় থাকবে না। কিয়ামতের দিন সে ফেরাউন, কারূন, হামান এবং উবাই বিন খাল্ফের সাথে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে।[116]
কোন কোন বিদ্বান বলেছেনঃ বেনামাযীকে উক্ত চার শ্রেণীর নিকৃষ্ট মানুষের সাথে হাশরের মাঠে উঠানোর কারণ হল মানুষ সাধারণতঃ ধন-সম্পদ, রাজত্ব, মন্ত্রিত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থেকেই নামায থেকে বিরত থাকে। ধন-সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায পরিত্যাগ করলে কুখ্যাত ধনী কারূনের সাথে হাশর হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায পরিত্যাগ করলে ফেরাঊনের সাথে হাশর হবে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায নষ্ট করলে ফেরাঊনের মনী্ত্র হামানের সাথে হাশর হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থেকে নামায ছেড়ে দিলে মক্কার কাফের ব্যবসায়ী উবাই বিন খাল্ফের সাথে হাশর হবে। এধরণের অপমানকর অবস্থা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।


No comments:
Post a Comment